অস্তিত্ব

 



বেশ তো ছিলাম পাথর হয়ে,

শত আঘাতেও যাই নি ক্ষয়ে।

নিজের একটা মূর্তির মতো অস্তিত্ব ছিলো, 

নিজেকে ধরে রাখার মত একটা জায়গা ছিলো।

তারপর তুমি বন্ধু রূপে এলে,

এই পাথুরে মুর্তিকে বরফ খন্ডে রূপ দিলে।

বেশ তো ছিলাম তখনও আমি,

বরফ হয়েও ঠাই দাড়িয়ে, 

 অনুভূতি গুলো প্রবাহিত হতো শীতল ধারা হয়ে। 

তারপর তুমি এলে কবিতা হয়ে,

তোমার কবিতার পরশে ভিতরটা ক্রমশ যাচ্ছে ক্ষয়ে।

ধমনী ও শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহ শুরু হলো,

দেখতে দেখতে সুন্দর হৃদয়ের একটা হৃৎপিণ্ড তৈরি হলো।

তারপর তুমি দু'হাত ভর্তি  ভালবাসা নিয়ে এলে,

প্রেমের পরশে পরম উষ্ণতায় পড়ছি গলে গলে।

কঠিন শক্ত খোলস ছাড়িয়ে আমারও তখন

জমাট বাঁধা ভালবাসা শরীর বয়ে পড়ছে চুয়ে চুয়ে।

তারপর তুমি এক ঝুড়ি স্বপ্ন নিয়ে এলে,

ঘর ছাড়িয়ে মুক্ত আকাশে উড়ায় স্বপ্নডানা দিলে।

তখন আমায় অনুপ্রেরণার সুতোয় বেঁধে

নাটাই হাতে দাড়িয়ে তুমি আর উড়ছি আমি।

যখন বুঝতে চাইলাম তোমার সুতোয় কত জোর,

সুতো ছিড়ে তখন তুমি ভয়ের কারণ মোর।

ছাই চাপা আগুনের মত ফিরিলে নিজ রূপে,

ভিষণ রাগ আর জেদী হয়ে পুড়াইলে আমায় ক্ষোভে। 

অনুতাপের তপ্ত আগুনে  তখন আমি গলে যাই

যেন শরীরের সমস্ত জমানো ভালোবাসা চোখ বয়ে,

টপ টপ করে পড়ছে পানি হয়ে।

এখন আমি আকারহীন জ্বল-মানব

না আছে কোন আকার না আছে আকৃতি। 

তারপর তুমি মিথ্যার মুখোশ পড়ে ছলনাময়ী হয়ে

এবার তুমি জলন্ত অগ্নিশিখা হয়ে এলে,

আমার সব সম্পর্কে আগুন দিয়ে নিজ হাতে পোড়ালে,

ঠিক ততটাই পোড়ালে যাতটা পোড়ালে,

জল তার অস্তিত্ব হারিয়ে বাষ্পে পরিণত হয়।

এখন আমি অস্তিত্ব হারিয়ে বাষ্প কণায় ভাসি,

তোমার দেওয়া নীল আকাশেই তবে বাষ্প রূপী মেঘ হয়ে।

নীল আকাশে ঠিক সবটুকু বাষ্প একদিন মেঘে পরিণত হবে,

সেই মেঘগুলো আরো ঘনো কালো রূপ ধারণ করবে।

হঠাৎ হঠাৎ বজ্র ক্ষরণ হবে আমার হৃদয় চিঁড়ে, 

তারপর সেই মেঘগুলো একসময় বিন্দু বিন্দু জল কণায় পরিণত হবে,

কোন এক শ্রাবণের অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে আমার চোখ ছুঁয়ে আবারো নেয়ে আসবো এই মাটির পৃথিবীতে। 

জানিনা তখন কোথায় আবারো জমা হবো,

হয়তো কোন গভীর কুপে, 

নয়তো কোন খাল-বিলের মাঝে,

অথবা কোন সান বান্দা পুকুরে 

যেখানে কিশোর কিশোরীরা মনের আনন্দে গোসল করে,

হয়তো বয়ে চলা কোন ক্ষিপ্ত নদীতে, 

নয়তো কোন নদীর মোহনায় 

যেখানে আমার পুরো শরীর আবারো 

ফিরে পাবো কিছু মিলিত নদীর মোহনায়। 

অথবা মিশে যেতে পারি ওই অসীম সমুদ্রের ঢেউয়ের

মাঝে, 

যেখানে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা 

অথবা থেকে যাবো পুরো সমুদ্র জুড়ে 

যেখানে ঢেউয়ের তালে আছড়ে পড়বো 

অজানা কোন কিশোরীর পায়ে।

পাথর হয়েই ভালো ছিলাম ধরা ছোঁয়া কোন পাথুরে মুর্তি হয়ে

কিন্তু আজ আমার কোন নিজস্ব অস্তিত্ব নেই।


কলমে- শরৎচন্দ্র নীল 

Post a Comment

0 Comments