দুই পৃথিবী


দুই পৃথিবী 

 শরৎচন্দ্র নীল 



আমার ব্যাস্ত শহরের আমি এক ব্যাস্ত নাগরিক,, 

প্রতিদিন রাস্তায় ট্রাফিকের যানজোটে আটকে থাকা আমার নিত্য দিনের রুটিন,, 

নিয়মের বেড়াজালে বন্দি জীবন আমার,,

শহরের অলিতে-গলিতে কোন এক রিকশা কিংবা বাসে অথবা পায়ে হেটে হেটে আমি চলতেছি শুধু চলেই যাচ্ছি কোন এক অজানা গন্তব্যের দিকে, 

হাটতে হাটতে ছুটতে ছুটতে যখন আমি ক্লান্ত, 

কোন এক ছোট্ট চায়ের দোকানে এক কাপ চা আর বিস্কুটে  নিজেকে করি শান্ত। 

মাথার ওপর সূর্য নিয়ে ঘুরি সারাদিন, 

পশ্চিমে অস্তাচলে সে লাল রঙে হয় রঙিন। 

মরীচিকার মতো তার পিছনে ছুটতে ছুটতে দেখি সন্ধা নেমেছে এ ধরায়,,

পৃথিবীকে অন্ধকার করে তখন সূর্য জমিনে লুকায়।

দিনশেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে তবুও শুয়ে পড়ি হয়ে ডান কাত,

মোবাইলে এলার্ম শুনে পার করি এভাবেই সঙ্গীহীন রাতের পর রাত।

কিন্তু দেখো তোমার গ্রাম বাংলার ঘরে,

নেই কোন ট্রাফিকের যানজোট নেই কোন নিয়মের বেড়াজাল যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।

সুন্দর প্রকৃতির মাঝে বসে তুমি  শান্তিতে কবিতা কিংবা গানে মেতে উঠতে পারো যাখন তখন,

আঁকতে পারো ছবি মনের মতন।

ইচ্ছে হলেই কোকিলের সাথে চিৎকার করতে পারো

গাইতে পারো পাখির সাথে গান,

মন খারাপের সীমান্ত পেরিয়ে তখন ভুলে যাও মনের জমানো হাজারো অভিমান।

নাচতে পারো খোলা পায়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে,

আবার কখনো দর্শী মেয়ের মতো গাছের ডালে দুততে দুলতে।

ফল ও ফুলের সাথে খেলা করো পাখি হয়ে গাছের শাখে শাখে,

কখনো আবার ডিঙ্গি নৌকায় চেপে ঘুরতে পারো নদীর বাঁকে বাঁকে। 

দিন পেরিয়ে তোমার ধরায় শেষ বিকেলে এসে,

সোনালী রোদের কিরণে তখন লাল সূর্যটা হাসে।

ডুবন্ত সূর্যে পশ্চিমে যখন অর্ধ তিমির বেলা,

নীড় মুখী পাখিরা তখন বসায় মিলন মেলা। 

সন্ধ্যা শেষে তোমার ধরায় রাত্রি যখন আসে,

বাঁশ বাগানের মাথায় উপর চাঁদটা তখন হাসে।

ঝিঁঝি পোকার শব্দে তুমি বালিশে দাও কাঁধ, 

পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে পার হয় তোমার স্বপ্নময় সব রাত।

দুটি মানুষ এক পৃথিবীর দুই প্রকৃতির ডাক,

শুধুমাত্র সময় আর অবস্থানের ফারাক।

Post a Comment

0 Comments